1940 খ্রিস্টাব্দে লাহোর অধিবেশনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য

                            ১৯৪০ খ্রীস্টাব্দের ২৩ মার্চ নিখিল ভারত মুসলিম লীগ ভারতীয় উপমহাদেশে একটি স্বতন্ত্র মুসলিম দেশের দাবী জানিয়ে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব অনুমোদন করে। বর্তমান পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সম্মেলনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে এটি পাকিস্তান প্রস্তাব হিসেবে অভিহিত হয়।

                              লাহোর প্রস্তাব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়াতে এবংভারতীয় নেতৃবৃন্দের মতামত না নিয়ে ভারত সরকারের যুদ্ধে যোগদানের কারণে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা আলোচনা করতে এবং ১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশসমূহে মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণের জন্য মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪০ সালে লাহোরে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সাধারণ অধিবেশন আহবান করেন। মুসলিম লীগের কর্মীদের একটি ক্ষুদ্র দল নিয়ে হোসেন শহীদ সোহরার্দী ১৯৪০ সালের ১৯ মার্চ লাহোরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। অধিবেশনে যোগদানের জন্য বাংলার মুসলিম লীগ দলের নেতৃত্ব দেন এ.কে ফজলুল হক এবং তাঁরা ২২ মার্চ লাহোরে পৌঁছেন। বাংলার প্রতিনিধি দলকে বিপুল জয়ধ্বনি দিয়ে বরণ করা হয়।
                                  
                            জিন্নাহ তাঁরদুঘণ্টারও অধিক সময়ব্যাপী বক্তৃতায় কংগ্রেস ও জাতীয়তাবাদী মুসলমানদের সমালোচনা করেন এবং দ্বি-জাতি তত্ত্ব ও মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি দাবি করার পেছনের যুক্তিসমূহ তুলে ধরেন। তাঁর যুক্তিসমূহ সাধারণ মুসলিম জনতার মন জয় করে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সিকান্দার হায়াত খান লাহোর প্রস্তাবের প্রারম্ভিক খসড়া তৈরি করেন, যা আলোচনা ও সংশোধনের জন্য নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সাবজেক্ট কমিটি সমীপে পেশ করা হয়। সাবজেক্ট কমিটি এ প্রস্তাবটিতে আমূল সংশোধন আনয়নের পর ২৩ মার্চ সাধারণ অধিবেশনে ফজলুল হক সেটি উত্থাপন করেন এবং চৌধুরী খালেকুজ্জামান ও অন্যান্য মুসলিম নেতৃবৃন্দ তা সমর্থন করেন। ২৩ মার্চ ১৯৪০ সালে পাকিস্থানের লাহোরে মুসলিম লীগের সম্মেলনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কর্তৃক উত্থাপিত এই প্রস্তাবটিই ইতিহাসে লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত।

                               এটা বলা হয়ে থাকে যে, জিন্নাহ আবুল হাশিমের উদ্ভাবিত উপায় যথাযথ বলে গ্রহণ করেন। হাশিমের মতানুসারে, জিন্নাহর উপদেশে সোহরাওয়ার্দী সম্মেলনের উন্মুক্ত অধিবেশনে প্রস্তাবটিকে রূপান্তরিত আকারে পেশ করেন। সুতরাং এটা প্রতীয়মান হয় যে, মুসলিম আইন প্রণয়নকারীদের দিল্লি সম্মেলনের পরও জিন্নাহ লাহোর প্রস্তাবের সংশোধনের পরিভাষা অনুসারে চিন্তা-ভাবনা করছিলেন না। জিন্নাহ যে সাবজেক্ট কমিটির সভাপতি ছিলেন সেটিও আপাতদৃষ্টিতে যতদূর মনে হয় এ গঠনতান্ত্রিক অবস্থান নেয় যে, মুসলিম আইন প্রণয়নকারীদের সম্মেলন লাহোর প্রস্তাবের সংশোধন আনয়নের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনার বৈধ বা যোগ্য স্থান নয়। অথবা লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে দেশের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার পর জিন্নাহও এটির সংশোধন করতে পারেন না। বাংলা থেকে মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দের একটি প্রতিনিধিদলকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদানপূর্বক জিন্নাহর নিকট প্রেরণ করা হলে তাঁদের সাথে সাক্ষাতের সময় তিনি নেতৃবৃন্দকে আশ্বাস দেন যে, লাহোর প্রস্তাবটি সংশোধন করা হয়নি। ১৯৪৬ সালের ৩০ জুলাই তারিখে জিন্নাহ তাঁর মালবারি পাহাড়ে অবস্থিত বাসভবনে বসে আবুল হাশিমকে লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে অভীষ্ট লক্ষ অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন।

Comments

Popular posts from this blog

1917 খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্যের কারণ

1905 খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের কারণ