তাইপিং বিদ্রোহ

চীনে  মাঞ্চু রাজবংশের অপশাসনের বিরুদ্ধেযে সমস্ত বিদ্রোহ  সংগঠিত হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তাইপিং বিদ্রোহ তাইপিং কথার অর্থ হলো স্বর্গীয় শান্তি বা মহান শান্তি খিষ্ট্রীয় প্রোটেস্ট্যান্ট চিন্তাধারার প্রভাবে এক ধরনের সমাজতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো তৈরি করা তাইপিং বিদ্রোহের মূল উদ্দেশ্য

 তাইপিং বিদ্রোহের কারণ-
 তাইপিং বিদ্রোহের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লক্ষ্য করা যায় 

1.দেশবাসীর দুর্দশা- 
উনিশ শতকের মাঝামাঝি চীনের সাধারণ মানুষ চরম দুর্দশার শিকার হন ।প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মুদ্রা সংকট ,বেকারত্ব প্রভৃতি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে ।

2.সরকারের অপদার্থতা-
চীনের দুর্বলও অপদার্থ মাঞ্চু সরকারের সময়ে  দেশে ব্যাপক অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে । হল এই সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হয়ে যায় ।

3.নানকিং-এর অপমানজনক সন্ধি-
 প্রথম অহিফেন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মাঞ্চু সরকার বিদেশি শক্তির সাথে নানকিং-এর অপমানজনক সন্ধি করতে বাধ্য হয় ।এই ঘটনা জনগণের  মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট করে তোলে।

4.কর্মচারীদের দুর্নীতি- মাঞ্চু সরকারের কর্মচারীরা ছিল সীমাহীন দুর্নীতিগ্রস্থ লোভী  ও অত্যাচারী ।তারা কৃষকদের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়। সেইসঙ্গে তা আদায়ের জন্য তীব্র অত্যাচার শুরু করে।

5. বিদেশি আধিপত্য-
 চীনে বিদেশিদের আধিপত্যের ফলে চীনারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে । বিদেশীরা  চীনে অর্থনৈতিক লুণ্ঠন চালায়। বিদেশি পণ্যের দাপটে চিনা শিল্প-বানিজ্য ধ্বংসের মুখে পড়ে চীনারা কর্মহীন হয়ে পড়ে।

6.ধর্ম জগতের সংকট-
 বৌদ্ধ ধর্মের সংসার বৈরাগ্য, তাও ধর্মের নানা কুসংস্কার প্রভৃতিতে চীনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। সেইসঙ্গে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার দেশের ধর্মীয় অবস্থাকে অধিকতর জটিল করে তোলে।

7.সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর উপর নিপীড়ন-
 মাঞ্চু শাসনকালে চিনা সমাজে কৃষক, শ্রমিক, কারিগর, মিস্ত্রি সহ দরিদ্র সাধারণ  জনগোষ্ঠী ছিল নিপীড়িত নির্যাতিত ।হলে তারা এই সমাজ ব্যবস্থার প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল ।

                        এই সমস্ত পরিস্থিতি জনিত অসন্তোষ বিদ্রোহের আকারে আত্মপ্রকাশ করে ।এর মূল লক্ষ্য ছিল, পুরাতন শাসন ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে নতুন শাসন ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা

তাইপিং বিদ্রোহের সূচনা-
এই বিদ্রোহের প্রাণপুরুষ ছিলেন হ্যাং-শিউ -চুয়ান ।মূলত এই সমস্ত কারণ কে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজেকে ঈশ্বরের সন্তান বলে ঘোষণা করেন। 1844 সালে ঈশ্বর সেবকদের সংস্থা গঠন করে নতুন ধর্ম প্রচার শুরু করেন । তিনি  মাঞ্চু শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান । তার ডাকে হাজার হাজার সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, ও বেকার মানুষ তার দলে যোগ দেন। 1850 সালে শুরু হয়ে যায় ঐতিহাসিক তাইপিং বিদ্রোহ বা আন্দোলন।

তাইপিংবিপ্লবের ফলাফল-

1. চীনাদের প্রশাসনিক পদ লাভ-
 টাইপিং আন্দোলনের শেষে মাঞ্চু সরকার কার্যত গদিচ্যুত হন ।

2. প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ শুরু-
 তাইপিং বিপ্লবের অভিজ্ঞতা  মাঞ্চু শাসকদেরকে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের উৎসাহিত করে। পূর্বে প্রাদেশিক  শাসকগণ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারত না। কিন্তু বিদ্রোহের প্রদেশের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । কোন জাতীয় সমস্যা সমাধানে  মাঞ্চু সরকার প্রাদেশিক কর্মচারীদের সাথে পরামর্শ করা যুক্তিসংগত মনে করে ।

3.বেসরকারি সেনাবাহিনীর অগ্রদূত-
 বিদ্রোহ দমনে নিয়োজিত  হিউনান যুগে বেসরকারি সেনাবাহিনীর অগ্রগামী হিসাবে গণ্য হয় ।

4. বিপ্লবের পরিবেশ বজায় রাখা-
  আন্দোলনের দমনের পর অবশিষ্ট   তাইপিংগণ আত্মগোপন করে এবং Heverand Earth Society তে যোগদান করে বিপ্লবের পরিবেশ সঞ্জীবিত করে রাখে। 

5.পরবর্তী বিপ্লবীদের উপর প্রভাব সৃষ্টি- 
তাইপিং বিপ্লব পরবর্তী বিপ্লবীদের উপর প্রভাব সৃষ্টি করেছিল ।















Comments

Popular posts from this blog

1917 খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্যের কারণ

1905 খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের কারণ

1940 খ্রিস্টাব্দে লাহোর অধিবেশনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য