আইন অমান্য আন্দোলনের পটভূমি
আইন অমান্য আন্দোলন ১৯৩০ সালে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নেতৃত্বে শুরু হয়। এ আন্দোলনের পটভূমি হলো সাইমন কমিশন । ভারতের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন এবং তা চূড়ান্তকরণের জন্য ১৯২৭ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক সাইমন কমিশন গঠিত হয়। কেবল ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যদের নিয়ে এ কমিশন গঠিত হওয়ার কারণে ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের সব ধরনের নেতা ও কর্মীরা এটিকে পুরোপুরি একটি শ্বেতাঙ্গ কমিশন বলে বর্জন করে। বাংলায় সাইমন কমিশনের বিরোধিতা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কমিশন গঠনের প্রতিবাদে এ প্রদেশের বিভিন্ন অংশে ১৯২৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালিত হয়। ওই বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় সাইমনের আগমন উপলক্ষে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। কলকাতার ৩২টি ওয়ার্ডে একই সাথে সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৮ সালের ১ মার্চ। এসব সভায় ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করার আন্দোলন পুনরায় শুরু করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
ভারতীয়গণ কর্তৃক সাইমন কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ১৯২৮ সালের মে মাসে মুম্বাই নগরীতে ড. এম.এ আনসারীর সভাপতিত্বে একটি সর্বদলীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে মতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ভারতের জন্য একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। ভারতীয় মুসলমানদের একটি অংশ ব্যতীত ভারতীয় সমাজের সর্বস্তরের জনগণ কর্তৃক
ভারতীয়গণ কর্তৃক সাইমন কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ১৯২৮ সালের মে মাসে মুম্বাই নগরীতে ড. এম.এ আনসারীর সভাপতিত্বে একটি সর্বদলীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে মতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ভারতের জন্য একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। ভারতীয় মুসলমানদের একটি অংশ ব্যতীত ভারতীয় সমাজের সর্বস্তরের জনগণ কর্তৃক
নেহেরু রিপোর্ট গৃহীত হয়। ১৯২৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারকে ‘নেহরু রিপোর্ট’ পুরোপুরিভাবে গ্রহণ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। ভারতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে (ডিসেম্বর ১৯২৮) ব্রিটিশ সরকারকে কার্যত এ মর্মে একটি চরমপত্র দেওয়া হয় যে, যদি ১৯২৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ভারতকে ডোমিনিয়ন মর্যাদা দান করা না হয় তাহলে সারা দেশব্যাপী আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করা হবে। অবশ্য ব্রিটিশ সরকার ১৯২৯ সালের মে মাসে ঘোষণা করে যে, শীঘ্রই ভারতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যে ডোমিনিয়নের মর্যাদা দেওয়া হবে। এর কয়েক মাস পর ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড আরউইন ঘোষণা করেন যে, ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে ভারতকে ডোমিনিয়নের মর্যাদা দান করা। তার এ বিবৃতির পর মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, তেজ বাহাদুর শাপ্রু, পন্ডিত মদনমোহন মালব্য এবং অ্যানি বেস্যান্ট-এর মতো ভারতীয় নেতৃবৃন্দ গভর্নর জেনারেলকে অধিকতর উদার ফরমুলা প্রণয়নের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ পন্থায় সমগ্র সাংবিধানিক সংকট নিরসনের আহবান জানান। তাঁরা কারাগারে আটক সকল রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি দাবি করেন। তাছাড়া তাঁরা প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠক আহবানের মাধ্যমে ভারতের সাংবিধানিক সমস্যাবলি আলোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ইতোমধ্যে সুভাষচন্দ্র বসু
ও জওহরলাল নেহেরুর মতো কংগ্রেসের তরুণ নেতৃবৃন্দ দাবি করেন যে, তাদের সংগ্রামের লক্ষ্য ডোমিনিয়নের মর্যাদা অর্জন নয় বরং ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করা। ১৯২৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে জওহরলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ অধিবেশন কংগ্রেস কার্যকরী কমিটিকে সারা দেশব্যাপী আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার কর্তৃত্ব প্রদান করে এবং এ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ২৬ জানুয়ারি তারিখে সারা ভারতে ‘পূর্ণ স্বরাজ’ (পূর্ণ স্বাধীনতা) দিবস পালন করা হবে।
গান্ধিজি প্রথমেই ঠিক করেছিলেন লবণ সত্যাগ্রহের দ্বারা আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করবেন । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে লবণের ওপর দ্বিগুণ কর বসিয়ে ব্রিটিশ সরকার জনসাধারণের দুরবস্থা বাড়িয়ে দেয় । এছাড়া সমুদ্রের জল থেকে লবণ প্রস্তুত করার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল এবং এই নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করা ছিল দণ্ডনীয় অপরাধ । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২রা মার্চ গান্ধিজি ভাইসরয় লর্ড আরউইনকে এক চিঠি লিখে লবণ উত্পাদনের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে বলেন এবং চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন যে, এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত না হলে তিনি লবণ আইন অমান্য করবেন । এর আগে গান্ধিজি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে জানুয়ারি 'ইয়ং ইন্ডিয়া' পত্রিকাতে সরকারের কাছে 'এগারো দফাদাবি' তুলে ধরেন । এই দাবিগুলির মধ্যে মাদক দ্রব্য বর্জন, বন্দিমুক্তি, লবণকর রদ, খাজনা হ্রাস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । ভাইসরয় লর্ড আরউইন গান্ধিজির দাবি অগ্রাহ্য করলেন ও এই প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অসম্মত হলেন । ক্ষুব্ধ ও অপমানিত হয়ে গান্ধিজি বড়লাটকে এক পত্রে লেখেন যে নতজানু হয়ে তিনি কেবলমাত্র এক টুকরো রুটি চেয়েছিলেন, বিনিময়ে তিনি পেলেন পাথর । এর পর থেকেই গান্ধিজি লবণ আইন ভঙ্গের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ।
Comments
Post a Comment