আফিম যুদ্ধ

চীনের ইতিহাসে আফিম একটি উল্লেখ যোগ্য পন্য। আফিমের ব্যবসা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাছাড়া আফিমের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে যে যুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছিল তা পুরো চীনের গতি ধারা পরিবর্তন করে দিয়েছিল শুধু তাই নয় আফিমের যুদ্ধ ছিল চীনের জন্য একটি দুর্বিসহ অধ্যায় ছিল। যে চীনা সাম্রাজ্যে কোন বিদেশী প্রবেশ করতে হলে চীনা সম্রাটকে নজরানা দিয়ে প্রবেশ করতে হত সেই চীনে আফিমের যুদ্ধের পরবর্তী যুগে বিদেশী শক্তিবর্গ পুরো চীন সাম্রাজ্যকে অর্ধ উপনিবেশে পরিনত করেছিল। চীন হয়েছিল পশ্চিমাদের সাম্রাজ্যবাদের খোরাক। একে একে বৃটেন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং সর্বশেষ রাশিয়াও চীনকে ধরাশায়ী করে তোলে। সে সময় চীনা সম্রাট চিয়া চিং পালিয়ে বাঁচে এবং তার ছোট ভাই বিদেশীদের সাথে মহা অসম চুক্তি করে একপ্রকার দেশকে বিদেশের হাতে তুলে দিয়ে নিজ দেশে পরাধীন থাকার মত বেঁচে থাকে। 

আফিম যুদ্ধের জন্য মূলত যে সকল কারণ দায়ি ছিলঃ

আফিম যুদ্ধের প্রথম এবং প্রধান কারণ বর্ণনা করেছি। সেটা হলো বণিকদের বিশাল পরিমান আফিম চীনা কমিশনার কর্তৃক ধ্বংস যা বিদেশী বণিকদের নিকট নিতান্তই অপমান জনক।

                        দ্বিতীয় , কারণ ছিল ব্রিটিশ বিণিকদের হাতে একজন চীনা নাগরিক নিহত হয়। এ ক্ষেত্রে কমিশনার এলিয়ট (বৃটেনের) ন্যায় বিচার না করে প্রহসনমূলক বিচার করলে বৃটেনের কমিশনার ক্ষেপে যায়।

                        কোন ঐতিহাসিক এই যুদ্ধের কারণ হিসেবে আফিম ব্যবসাকে এককভাবে দায়ি না করে বরং এর পিছনে আরো কিছু কারণের অবতারণা ঘটান। যেমন তারা মনে করেন যে, চীনের নজরানা প্রথা, ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথা এবং কাউটাউ প্রথাও এ যুদ্ধের পিছনে অন্যতম কারণ।

                        আবার কোন কোন ঐতিহাসিক এ কারণগুলোর কোনও কারণকে মূল কারণ হিসেবে স্বীকার করতে নারাজ। বরং তারা এগুলোকে শুধু মাত্র অজুহাত হিসেবে ব্যবহার স্বীকার করেন। এবং মূল কারণ হিসেবে তারা মনে করেন যে, বৃটেন তথা পশ্চিমা বিশ্বের মূল টার্গেট ছিল সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন। এই আগ্রাসনের জন্য তারা কোন একটি কৌশল এবং অজুহাত খুঁজতেছিল। এবং আফিম ব্যবসা ছিল এরই একটি পূর্ব কুটচাল বা একটি ফাঁদ। যে কারণে চীনারা বার বার পদক্ষেপ নিয়েও আফিমের ব্যবসা বন্ধ করতে পারেনি। এর আগেও তারা ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবসা করতে এসে ভারতীয় উপমহাদেশে ক্ষমতা বিস্তার করে ছাড়ে।

                        কারণ বা অজুহাত যেটাই হোক না কেন ১৮৪০ সালে এ্যাডমিরাল এলিয়টের নেতৃত্বে ইংরেজরা প্রচুর সৈন্য ও অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে চীনে আক্রমন করে। চীনারা এই আক্রমন প্রতিহত করে নিজেদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর হয়। এভাবে প্রথম ঈঙ্গ-চীন যুদ্ধ তথা প্রথম আফিমের যুদ্ধ সূচনা ঘটে। ইমানুয়েল সু বলেছেন, “এ যুদ্ধে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে চীনারা বেআইনী আফিমের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিল।” মূলত সে কারণেই ঐতিহাসিকরা এ যুদ্ধকে প্রথম আফিম যুদ্ধ হিসেবে নামকরণ করেছেন। যাইহোক চীনারা বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অসীম সাহসের সঙ্গে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করলেও এলিয়টের নেতৃত্বাধীন বৃটিশ বাহিনীর যুদ্ধ কৌশল এবং অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের নিকট পরাজিত হয় চীনা বাহিনী। এ যুদ্ধে প্রায় ২০,০০০ চীনা সৈন্য এবং মাত্র ৫০০ বৃটিশ সৈন্য নিহত হয়।
                           ১৮৪২ সালের ২৯ আগস্টে নানকিংয়ের চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রথম আফিমের যুদ্ধের আবসান হয়।

Comments

Popular posts from this blog

1917 খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্যের কারণ

1905 খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের কারণ

1940 খ্রিস্টাব্দে লাহোর অধিবেশনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য