জার্মানির নাৎসিবাদ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জার্মানির অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে । জার্মানিতে ভাইমার প্রজাতান্ত্রিক সরকারের দুর্বলতা নানা দিক দিয়ে ফুটে বেরুতে থাকে । দেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব, শিল্পবাণিজ্যে মন্দা, জনস্ফীতি, খাদ্যসংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি নানান সমস্যার কারণে মানুষের জীবন যখন দুর্বিষহ হয় ওঠে ও ভার্সাই সন্ধির অপমানজনক শর্তগুলো জার্মানদের মধ্যে গভীর উত্তেজনা ও প্রতিশোধ স্পৃহা জাগিয়ে তুলছে, তখন ইটালির অনুকরণে জার্মানিতেও নাৎসি নামক এক শক্তিশালী দলের উদ্ভব হয় । ফ্যাসিস্টদের মতো নাৎসিরাও ছিল প্রতিক্রিয়াশীল ও গণতন্ত্রের ঘোর বিরোধী । দেশে জাতীয়তাবাদী সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করাই ছিল নাৎসিদের লক্ষ্য । ইটালির মতো যুদ্ধবিদ্ধস্ত জার্মানিতেও সর্বক্ষেত্রে সংকট প্রকটরূপে দেখা দেয় । ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলি একদিকে যেমন জার্মানিকে সবদিক থেকে আঘাত হানে অন্যদিকে চুক্তির অপমানজনক শর্তাবলি জার্মানদের অন্তরে প্রতিশোধ গ্রহণের স্পৃহা তীব্র করে তোলে । জার্মানির ভাইমার প্রজাতন্ত্র সাম্যবাদী আদর্শকে ঠেকালেও জনগণের স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে বা তাদের নতুন আশা আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করতে পারছিল না ।
নাৎসিবাদ হচ্ছে হিটলার ও তার দল নাৎসি পার্টি কর্তৃক শাসনব্যবস্থা। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে দেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন প্রার্থী হয়ে হিনডেনবার্গের কাছে হিটলার পরাজিত হন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে হিনডেনবার্গ হিটলারকে তাঁর প্রধানমন্ত্রী (চ্যান্সেলার) নিযুক্ত করেন। কিছুদিনের মধ্যেই হিটলার সকল ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে দেশে নাৎসি একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। ক্রমে জার্মানিতে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে হিটলার ও তাঁর নাৎসিদল জার্মানির শাসক দলের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়। ধীরে ধীরে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের গ্রেফতার, অপহরণ, নির্বাসন ও গোপন হত্যার মাধ্যমে জার্মানির কমিউনিস্ট ও সমাজতন্ত্রীদের নির্মম ভাবে দমন করে হিটলার তাঁর নাৎসি দলের সাহায্যে রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা দখল করে নেন। অতঃপর নাৎসি পার্টি জার্মানিতে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং হিটলার এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাতান্ত্রিক নাৎসি শাসনব্যবস্থা চালু করেছিলেন। এই ভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানিতে নাৎসিবাদের উত্থান ঘটেছিল।
Comments
Post a Comment