প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ

পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যত যুদ্ধ-বিগ্রহ হয়েছে এর মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অন্যতম।১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত সংঘটিত এই মহাযুদ্ধের ব্যাপ্তি।এই মহাযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞ অতীত কালের সকল যুদ্ধের নৃশংসতা কে হার মানিয়েছে।যে সকল কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তা নিম্নে আলোচনা করা হল--
উগ্র জাতীয়তাবাদ:-

অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদ থেকে উগ্র জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটেপ্রত্যেক দেশের উৎকট জাতীয়তাবাদ নিজ নিজ দেশের শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করতে থাকে জার্মানি ছিল এইরকম উগ্র ও অসহিষ্ণু জাতীয়তাবাদের সবথেকে বড় উদাহরণ সংকীর্ণ উগ্র জাতীয়তাবাদ জার্মানি ছাড়াও ইতালি ফ্রান্স ইংল্যান্ড ও জাপানেও প্রকাশ পায় ফলে বিভিন্ন জাতির মধ্যে বিদ্বেষ এমনভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে যা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান অসম্ভব হয়ে পড়ে হলি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পথ প্রশস্ত হয় 

সামরিকবাদ- 
উগ্র ও অসহিষ্ণু জাতীয়তাবাদ জন্ম দেয় সামরিক বাদের .উনবিংশ শতাব্দী থেকে পাশ্চাত্য রাষ্ট্রগুলো ধারণা করতে থাকে যে যুদ্ধ ছাড়া জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা লাভ করা যায় না. 1871 এর ফ্রান্স রাশিয়ার যুদ্ধের পর ইউরোপের অনেক দেশে জার্মানির সামরিক বাদকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে. ফলে ইউরোপের শুরু হয় অসভ্য অস্ত্র প্রতিযোগিতা, সামরিক শক্তি হিসেবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে রেষারেষি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে

অর্থনৈতিক কারণ:
 প্রথম মহাযুদ্ধের পুর্বে ইউরোপের অন্যান্য দেশ, আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকাতে নিজ নিজ কলোনি স্থাপন করে ফেলেছিলো। ব্রিটিশ এবং ফ্রান্স অর্থনৈতিক ভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও জার্মান দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছিলো। সেই সময় জার্মান পণ্য ব্রিটিশ পণ্যের বাধার সম্মুখীন হয়। আগের সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পাশে আরেকটি নতুন শক্তির আগমন ঘটে। যার ফল দ্বন্দ্ব। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে সংঘাতের সূচনা করে যা পরবর্তীকালে বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়।

গোপন চুক্তি
১৮৭২ সালে বার্লিন এক সম্মেলন আহ্বান করে। এবং জার্মানি, রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার মাঝে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই সম্মেলনে জার্মানির সম্রাট প্রথম উইলিয়াম, রাশিয়ার জার – প্রথম আলেকজান্ডার এবং অস্ট্রিয়ার সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিস উপস্থিত হন। এই তিন সম্রাটের চুক্তি ইতিহাসে আজো ত্রিশক্তির চুক্তি নামে পরিচিত। আবার ১৮৭৭-১৮৭৮ সালে রুশ-টার্কিস যুদ্ধে এই মৈত্রীর কার্যকারিতা বিনষ্ট হয়। এবং রাশিয়া এই ত্রিশক্তির চুক্তি থেকে বেড়িয়ে যায়। আবার অন্য দিকে জার্মান খুব দ্রুত অস্ট্রীয়ার সাথে চুক্তি করে। মূলত এই সময় ইউরোপ ছিলো গোপন চুক্তির আতুর ঘর। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। আর এই অবিশ্বাস বয়ে আনে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ!

রাজনৈতিক কারন:
সেই সময় ইউরোপে গণতন্ত্রের অভাব পরিলক্ষিত হয়। সবাই ছিলো সম্রাজ্য বিস্তারে ব্যস্ত। আগ্রাসী মনোভাবে নিমগ্ন। যেহেতু রাজনৈতিক অবস্থা ছিলো চড়ম আকারে অস্থিতিশীল, তাই সেই সময়কার রাষ্ট্র প্রধানগণ আলোচনায় না যেয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পরেছিলো।
.

Comments

Popular posts from this blog

1917 খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্যের কারণ

1905 খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের কারণ

1940 খ্রিস্টাব্দে লাহোর অধিবেশনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য